১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর জাতীয় আশা-আকাঙ্খার পরিপূরক হিসাবে জন্ম নিতে থাকে গ্রুপ থিয়েটার। সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহকে উপজীব্য করে সামাজিক ক্রিয়ার অংশগ্রহণ করতে থাকে। ফলে নাটক ক্রমশঃ হয়ে ওঠে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। কিন্তু ক্ষমতাশীনদের চরম অনীহার ফলে নাটকের পরবর্তী বিকাশ রুদ্ধ হয়ে উঠে। গ্রুপ থিয়েটার ও মঞ্চ নাট্য শিল্পীদের অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আশা-আকাঙ্খাকার পূর্ণ প্রতিফলনের জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের। আর এই আন্দোলনের প্রয়োজনেই ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর গড়ে উঠে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান। সমাজ ও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং হাজার বছরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারায় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে স্বপ্নের স্বদেশ বিনির্মাণে পরিচালিত এই নাট্যান্দোলনের সমন্বিত সংগঠন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, যার বর্তমান সদস্য সংগঠন সারা দেশে প্রায় ৪০০টি।

স্বাধীনতা যে একটা জাতির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির কতটা সুফল করতে পারে তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ বাংলাদেশের নাটক। প্রয়েজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও আমাদের নাটক আন্তর্জাতিকভাবে যে জায়গায় এসে পৌঁছেছে, তা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। এবং এ নিয়েই আমরা মঞ্চ শিল্পের উন্নয়নের স্বপ্ন বুনি। কিন্তু অপর পিঠে রয়েছে স্বপ্নভঙ্গের এক বিরাট দৃশ্য। সেটি হচ্ছে মঞ্চনাটকে পেশাদারিত্ব গড়ে না উঠা। মঞ্চ নাটক করে অর্থ পাওয়া তো দূরের কথা প্রায় প্রদর্শনী শেষে ঋণ করে ঘরে ফিরতে হয়।

স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবীত হয়ে যে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা শুরু হয়েছিল আজ ২০১৮ সালে মুক্তবাজার অর্থনীতিরকালে এসে বিরাট প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। অদম্য উৎসাহ ভর করে নানান প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতা আর কৃচ্ছসাধনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক নির্ভরতা বিহীন সুদীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে সেই নাট্যচর্চা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? কতদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব এ চর্চা, উৎসাহ উদ্দীপনাকে? ইতোমধ্যে পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন নাট্যদল ও শিল্পীদের বিভিন্ন আকারে গ্রান্ড দেওয়া শুরু হয়েছে। সুতরাং গ্রুপ থিয়েটার নামের আবরণে মুখ ঢেকে স্বেচ্ছাসেবী নাট্যদলগুলোর নাট্য শিল্পীদের সামনে এখন বেঁচে থাকা না থাকার প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে।

ঘুর্ণাবর্তে আর নয়। এখনই সমস্যা নির্বাচন করে ছিনিয়ে আনতে হবে কাংখিত মুক্তি।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে শিল্পের সকল বাহনের মধ্যে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়েছে। সমাজ ও শিল্পের প্রতি দায়বধদ্ধতা এবং হাজার বছরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারায় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে স্বপ্নের স্বদেশ বির্নিমাণে পরিচালিত এই নাট্যান্দোলনের সমন্বিত সংগঠন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, যার বর্তমান সদস্য সংগঠন সারা দেশে প্রায় ৪০০টি।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন (বিজিটিএফ) ২৯ নভেম্বর ১৯৮০ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফেডারেশন প্রধান উদ্দেশ্য

– থিয়েটার ব্যক্তিত্বের পেশাদারী স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে;
– নাটক বিকাশ; আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত নাটক;
– মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন আইন বিরুদ্ধে পাবলিক মতামত জোরদার করা;
– দেশের বিভিন্ন অংশে স্থায়ী পর্যায়ে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য;
– গ্রুপ থিয়েটারের মতাদর্শ পালনের জন্য;
– সামাজিক উদ্দেশ্য সঙ্গে নাটক অবহিত;
– নাটক সম্পর্কিত উপকরণ প্রকাশ করতে;

– একটি থিয়েটার যাদুঘর স্থাপন করা;
– জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মশালার ব্যবস্থা করা;
– জাতীয় নাট্য উৎসব পরিচালনা করা; এবং
– থিয়েটার সঙ্গে যুক্ত মানুষের জন্য কল্যাণ প্রোগ্রাম গ্রহণ।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকা। তিন কমিটি ফেডারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে: সাধারণ কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং নির্বাহী কমিটি। তার সূচনা থেকে, জনসাধারণের মধ্যে জনসাধারণের মধ্যে সাংস্কৃতিক সচেতনতা বিকাশ এবং একটি থিয়েটার সংস্কৃতির বৃদ্ধি উত্সাহিত একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। সাম্প্রদায়িক অনুভূতি ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের সচেতনতা জাগানোর জন্যও ফেডারেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
প্রতিষ্ঠা:  ২৯ নভেম্বর, ১৯৮০
উদ্দেশ্য:  বাংলাদেশের সকল থিয়েটার গ্রোপ সংগঠিত করা
সদস্যঃ  ৪০০
চেয়ারম্যানঃ  লিয়াকত আলী লাকী
ঠিকানা:  থিয়েটার ক্লাব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী